ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিষ্ঠার গল্প এক সাধারণ ঘটনা থেকে শুরু হলেও, এটি ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেয়। ১৬শ শতকের শেষের দিকে, মসলার বাজারে ওলন্দাজ বণিকদের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। এক পাউন্ড গোলমরিচের দাম হঠাৎ পাঁচ শিলিং বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটিশ বণিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এই তুচ্ছ ঘটনাই ২৪ জন ব্রিটিশ বণিককে একত্রিত করে এবং তারা ১৫৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর লন্ডনের লিডেন হল স্ট্রিটে এক বৈঠক করেন।এই বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেন, ১১৫ জন শেয়ারহোল্ডার এবং £৭২,০০০ পুঁজি নিয়ে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করবেন। ১৫৯৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর রানী প্রথম এলিজাবেথ এই কোম্পানিকে একটি রয়্যাল চার্টার প্রদান করেন, যা তাদের আগামী ১৫ বছরের জন্য পূর্বদেশের সঙ্গে একচ্ছত্র বাণিজ্যের অধিকার দেয়। এভাবেই আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়।এরপর, ১৬০০ সালের ২৪ আগস্ট কোম্পানির প্রথম বহর “হেক্টর” নামে পাঁচটি জাহাজ ভারতের পশ্চিম উপকূলের সুরাট বন্দরে নোঙর ফেলে। এটি ছিল ব্রিটিশদের ভারতবর্ষে প্রথম পদার্পণের মুহূর্ত। সামান্য এক ব্যবসায়িক উদ্যোগ থেকে শুরু করে, এই কোম্পানি এক সময় ভারতীয় উপমহাদেশের ভাগ্য নির্ধারণে বিশাল ভূমিকা পালন করে।
প্রায় দেখা গেছে যে, ইতিহাসে অনেক বড়োসড়ো বিখ্যাত ঘটনাটি হয় অতি তুচ্ছ কোনো কারণে, তেমনি ব্রিটেনের উপনিবেশ গড়ার কাহিনীর সূত্রপাত হয়েছিল সামান্য ঘটনা থেকে। তখন ওলন্দাজ বণিকরা আন্তর্জাতিক মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করত। হঠাৎ এক পাউন্ড গোলমরিচ এর দাম পাঁচ সিলিং বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদেই ২৪ জন ব্রিটিশ বণিক একটা কোম্পানি খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৫৯৯ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা নাগাদ লন্ডনে লীডেন হল স্ট্রিটের এক ভাঙাচোরা বাড়িতে তারা একটা সভা করল। সিদ্ধান্ত হলো ১১৫ জন শেয়ারহোল্ডার এবং ৭২ হাজার পাউন্ড শেয়ার ক্যাপিটাল নিয়ে তারা একটা কোম্পানি খুলবে। তারা কোম্পানির আসন পেল ১৫৯৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর এবং সম্রাজ্ঞী প্রথম এলিজাবেথের সই করা ফরমান হাতে নিয়ে কোম্পানির কর্ণধাররা এক বিরাট ভূখন্ড জুড়ে বাণিজ্য করার অধিকার পেল প্রথম ১৫ বছরের জন্য। এ ঘটনার ঠিক ৮ মাস পরে হেক্টর নামে পঁচিশ টনের এক বাণিজ্য জাহাজ ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে আগস্টে ভারতের উত্তরের ছোট সুরাট বন্দরে নোঙ্গর করল। অর্থাৎ সেদিনই ব্রিটিশরা প্রথম ভারতবর্ষের মাটিতে পা দিয়েছিল। ভারতের মাটিতে ইংরেজদের এ পদার্পণ সেদিন খুব সাদামাটা নিরীহ হলেও জাহাজের ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হকিন্সের মনোভাবটা খুব সাধু বা নিরীহ ছিল না। লোকটার স্বভাব ছিল দস্যুবৃত্তি ও লুটের নেশা ছিল তার মধ্যে। যেদিন তার সাথে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাক্ষাৎ হয়েছিল, সেদিন তার মনে হচ্ছিল জাহাঙ্গীরের তুলনায় সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথের রাজসভা কত ম্যাড়মেড়ে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের পাশের রানী এলিজাবেথকে সামান্য এক জমিদারনী ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না। সেখান থেকে গোড়াপত্তন হয় ব্রিটিশ শোষণের জঘন্যতম অধ্যায়।
ফেসবুক থেকে।