২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা: এনসিপি

নতুন সংবিধান প্রণয়নসহ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
শেয়ার করুন:

ঢাকা, ৩ আগস্ট, ২০২৫ : নতুন সংবিধান প্রণয়নসহ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ রোববার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

এর আগে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্লোগান সহকারে মিছিল নিয়ে দলের নেতাুকর্মীরা শহীদ মিনারে জড়ো হন। এসময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত হন। এরপর একে একে বক্তব্য দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতিশ্রুতি দেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার। আওয়ামী লীগের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয় বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনের ডাক দিয়েছিলাম। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করে এক অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন করেছিলাম। আমাদের সুস্পষ্ট এক দফা দাবি ছিল আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চাই। কেবল এক ফ্যাসিবাদী শাসক হঠিয়ে আরেক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার উত্থানের সম্ভাবনাকে জিইয়ে রেখে আমরা নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরতে পারিনি। বরং রাষ্ট্র ও সমাজে দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সমূলে উৎপাটনে আপনাদের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমরা আপনাদের, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি গঠন করেছি।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক ও কাঠামোগত সংস্কারে বিভিন্ন শক্তিশালী পক্ষের বিরোধিতার মুখেও এনসিপি আপনাদের পক্ষ থেকে মৌলিক সংস্কারের জন্যে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই মৌলিক সংস্কারগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন ছাড়া ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে ফেলে আমাদের ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান গণতান্ত্রিক বিপ্লবে রূপান্তরিত হবে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৯৭২ সালের মুজিববাদী সংবিধান ও তৎপরবর্তী বাকশালি অপশাসন, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ ছিলো মানুষের এই সুদীর্ঘ ত্যাগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি নিষ্ঠুর প্রতারণা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো একটি একমুখী ও স্বেচ্ছাচারী মতবাদ। তারপর রাষ্ট্র গঠনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরোলেও স্বাধীনতার পাঁচ দশকেও এমন একটি রাষ্ট্র তৈরি করতে পারিনি যা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। বরং দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছিল। জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপুল গণবিস্ফোরণ ছিলো দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এই অপশাসনের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের গণরায়। আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই নতুন স্বাধীনতা কেবল সরকার পরিবর্তনের জন্যই ঘটেনি। যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ কয়েম হয়, আমরা সে ব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছিলাম।

নাহিদ বলেন, ফ্যাসিবাদ পতনের বছরপূর্তিতে এই জুলাইয়ে আমরা টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, জাফলং থেকে সুন্দরবন, বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-শ্রমিক-জনতা; আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা; চায়ের টঙের দোকান থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চা শ্রমিক আপনাদের সবার ভালবাসায় সিক্ত হয়েছি। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে, আমাদের শহীদ পরিবার আর আহত ভাই-বোনদের প্রত্যাশার কথা শুনেছি। শুনেছি আপনাদের নিত্যদিনের সংগ্রাম, আকাঙ্ক্ষা, এবং স্বপ্নের কথা। আমাদের দলের জন্ম, এনসিপির জন্ম, আমাদের সকল শ্রম, আপনাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আপনাদের অভিযোগ-অনুযোগ, প্রত্যাশা আমাদের ভাবনাকে করেছে গভীর, আমাদের লক্ষ্যকে করেছে সমৃদ্ধ। তাই ঠিক একবছর পর আমরা আবার শহীদ মিনারে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকের ২৪ দফা ইশতিহার ঘোষণা করছি।(বাসস)

শেয়ার করুন: