ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নব গঠিত সেনুয়া ইউনিয়নে এবারই প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল রবিবার। ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। শনিবার ও আজ সেনুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১২ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া, আখানগর ও রাজাগাঁও ভেঙে আরো দুটি ইউনিয়ন গঠনের পর নতুন একটি থানার ঘোষণা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে ঠাকুরগাঁও সদর থানাকে বিভক্ত করে রুহিয়া থানা নামে নতুন থানা গঠন করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। অনুমোদনের পর ২০১৩ সালের ৪ মে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে থানার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। পরে ঠাকুরগাঁও রুহিয়া থানাকে উপজেলায় রুপান্তরে উদ্যোগ নেয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নকে ভেঙে ২০২১ সালের ১ এপ্রিল সেনুয়া নামে আরেকটি ইউনিয়ন গঠন করা হয়। গত ২৯ ডিসেম্বর নব গঠিত সেই ইউনিয়নের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামীকাল ৭ ফেব্রুয়ারী ইউনিয়নের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, সেনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নোবেল কুমার সিংহ (নৌকা), দলটির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম (চশমা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও বিএনপি সমর্থক মতিউর রহমান ( মোটরসাইকেল) ও মতিউর রহমান চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর ইউনিয়নে মোট ভোটার ৬ হাজার ৮৮৫। পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ৫২৪ আর নারী ভোটার ৩ হাজার ৩৬১।
সেনুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজার, গ্রাম-পাড়ায় প্রার্থীদের পোস্টার ঝুলছে। বাজারের চায়ের দোকানগুলোতে চলছে নির্বাচন নিয়ে মানুষের নানামূখী বিশ্লেষণ।
এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নের প্রথম ভোট নিয়ে তাঁদের মধ্যে রয়েছে দারুণ কৌতূহল; সঙ্গে নানা জল্পনাকল্পনা। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মতো সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে, নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে তাঁদের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোর উন্নয়ন হবে ও বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে—এমনটাই প্রত্যাশা তাঁদের।
সেসময় কিশমত চামেশ্বরী এলাকার একটি দোকানে বসে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছিলেন তানজিমুল ইসলাম(১৯)। তিনি বলেন, নতুন ইউনিয়নে এবারই প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর আমিও এবার প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তাই এভোট নিয়ে আমার আগ্রহের শেষ নেই।
সম্প্রতি স্নাকত্তোর শেষ করে চাকুরির সন্ধান করছেন আহসানুল হক। তিনি বলেন, এবার ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচনের ভোট দেব। যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন তাঁদের কাছে চাওয়া, তিনি যেন বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করেন, ভাতার কার্ড পেতে হয়রানি হতে না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নতুন ইউনিয়নে প্রথম নির্বাচন। তাই ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও মানুষের মধ্যে শঙ্কাও দেখা গেছে। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী সুচিত্রা রায় বলেন, আমি নতুন ভোটার। আর আমাদের ইউনিয়নটিতেও এবারই প্রথম ভোট হচ্ছে। জীবনের প্রথম নির্বাচনে ভোট দেব; এটা অনেক আনন্দের। কিন্তু কয়েকদিন থেকে এলাকায় হুমকি-ধামকি, মারপিট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। ভোটের দিন এমন হলে জীবনের প্রথম ভোটাও মিস হয়ে যায় কিনা আশঙ্কায় আছি।
মোলানখুড়ি গ্রামের ভোটার সিরাজুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, চৌধুরীহাট এলাকার আব্দুস সোবহান, সামছুল আলমসহ বশে কয়কেজন ভোটার জানান, এটাই এ ইউনয়িনরে প্রথম ভোট। নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়ে আমরা প্রথমবারের নির্বাচন স্মরনীয় করে রাখতে চাই।
বিএনপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মতিউর রহমান বলনে, কেন্দ্র দখলের সকল প্রস্তুতি শেষ করছে নৌকার প্রার্থী। তবে ভোটার যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তবে আমার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
আর আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী নোবেল কুমার সিংহ বলেন, আমি কর্মী সমর্থক নিয়ে ইউনিয়নের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তের বাড়ি বাড়ি ছুটে গিয়েছি। ভোটাররা সবাই নৌকার জয় চান। যেখানে ভোটাররা আমার সঙ্গে রয়েছেন, সেখানে আধিপত্য বিস্তারের প্রয়োজন নেই।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামানের বলেন, সেনুয়া ইউপি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। ইউনিয়নটিতে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়।