ভোলা জেলার রুপকার নাজিউর রহমান মঞ্জুর আজ ১৪ তম মৃত্যু বার্ষিকী

শেয়ার করুন:

ইমরান তাহির ভোলাঃ ভোলা একটি দ্বীপ জেলা।এ জেলার উন্নয়নের রুপকার মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু’র ১৪ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ।তিনি ২০০৮ সালের ৬ই এপ্রিল  লিভার সমস্যা জনিত কারনে মাত্র ৬০ বছর বয়সে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। সাবেক এলজিআইডি মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সফল মেয়র ও আধুনিক ভোলার রূপকার মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু ১৯৪৯ সালের ১৯ মার্চ বালিয়াতে ভোলার ঐতিহ্যবাহী মিয়া পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা মরহুম বজলুর রহমান মিয়া। ৪ ভাই এর মধ্যে তিনি ২য়। মঞ্জুর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এম.কম পাস করেছেন। প্রথম জীবনে মতিঝিলে তিনি এশিয়াটিক ট্রাভেলের সাথে জড়িত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী।রাজনীতির ক্ষেত্রেও তিনি ছিলন সফল।তিনি চারদলীয় ঐক্য জোটের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) শরীক দল ছিলেন।তাছাড়াও ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঢাকা সিটিকর্পোরেশনের পূর্বে নাম ছিল ঢাকা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন তা পরিবর্তন করে তার নাম দেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন।

তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেন।এরশাদের আমলে তিনি ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় দফতরের মন্ত্রী। তিনি ভোলা জেলার সকলের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর জনহিতকর কর্মকান্ডে ছোঁয়া পায়নি এমন এলাকা খুবই বিরল। তাঁর ভক্তরা তাঁকে কখনো “হাতেম ভাই” বলে সম্বোধন করতেন। নিজের অর্থে নির্দিষ্ট সময়ে তিনি ব্যাপকভাবে জনসেবামূলক কাজ করেছেন যার জুড়ি মেলা ভার। তাঁর আশা আকাঙ্খা ছিল অনেক।

তিনি বলেছিলেন, ‘সুযোগ পেলে আমি ভোলাকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে ছাড়ব। তার কথার সাথে কাজের মিল রেখেই এগিয়েছেন তিনি ।ভোলার উন্নয়নের স্বার্থে নিয়েছিলেন নানা রকম পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নও করেছেন অনেক কাজ। শিক্ষা বিস্তার মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু ১৯৮৬ সালে ভোলার এমপি নির্বাচিত হয়ে প্রথমে জোড় দেন শিক্ষার উপর।

তিনি মনে করেন একটি জাতি যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে তবে তারা অতি দ্রুত উন্নতি করতে পারবে। তাই তিনি ভোলা শিক্ষার মান বিস্তারের জন্য ৪টি কলেজ ও ১০০ উপরে মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন।এর পাশাপাশি তিনি শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ভোলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিয়ে শিক্ষার উন্নয়নের জন্য একটি তহবিল গঠন করেন। এই তহবিল থেকে তিনি বিভিন্ন গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান সহ বিভিন্ন শিক্ষার উপকরন দিয়ে সাহায্য করতেন।

শিক্ষা ক্ষেত্রে তার নামে গড়া নাজিউর রহমান কলেজ ভোলার জেলা মধ্যে অন্যতম বিদ্যাপিঠ হিসাবে গড়ে উঠেছে।স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন স্বাস্থ্য সেবা জনগনের দোড় গোড়ায় পৌছে দেয়ার জন্য তিনি গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। এর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সময়ে অসহায় দুস্থ দের সেবা দেয়ার জন্য বিনা মূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করতেন। এবং বিনা মূল্যে ঔষধ প্রদান করতেন।

তিনি জেলার চিকিৎসা সেবার জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল নির্মান করেন। সদর হাসপাতালে তিনি প্রথম রক্ত দান করে একটি ব্লাড ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন।তিনি ভোলাবাসীকে মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিনা মূল্যে ৪ হাজার টিউবওয়েল স্থাপন করেন।তার দেয়া টিউবয়েলে গুলো আজও উপকার ভোগীরা সুফল পেয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও তিনি জেলা পশু হাসপাতাল নির্মান করেন। যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভোলা জেলার সর্বস্তরের জনগনের যোগাযোগের সুবিধার জন্য তিনি রাস্তা-ঘাট , ব্রিজ , কালবার্ট নির্মান করেন। তিনি ইউনিয়ন পর্যায়েও যোগাযোগ ব্যাবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেন। এছাড়াও তিনি হ্যালিপ্যাড, ভোলার বৃহত্তম বাস টার্মিনাল নির্মান করেন। তিনি ঢাকার সাথে ভোলার যোগাযোগের জন্য লঞ্চ টার্মিনাল নির্মান ও লঞ্চ যাতায়াতের ব্যবস্থার সুযোগ করে দেন। শহরের উন্নয়ন ভোলা শহরকে ঢাকার পরে দ্বিতীয় রাজধানী রুপ দেয়ার জন্য তিনি প্রথমে ঢাকার বাহিরে সর্বপ্রথম ভোলাতে সোডিয়াম বাতি স্থাপন করেন।

ভোলার উন্নয়নের সার্থে তাকে মামলা এমনকি কারাগারে যেতে হয়েছে।এছাড়াও তিনি ভোলা পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেনী থেকে প্রথম শ্রেনী উন্নীত করন ১০ টি শহর উন্নয়নের মধ্যে ভোলা শহরকেও তালিকাভুক্ত করে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা ও বিদুৎ প্লান স্থাপন তাঁর আমল থেকেই শাহবাজপুর গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। এবং ভোলাকে বিদুৎ’র চাহিদা মেটানোর জন্য ৬ মেগওয়াট বিদুৎ স্থাপন করেন।

তিনি জেলা প্রশাসক ভবন , এসপি অফিস, উপজেলা ভবন, জজকোর্ট ,পার্ক, শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মান, ভোলাকে বিভিন্ন দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন বনায়ন কর্মসূচী গ্রহন করে থাকেন। তিনি ভোলাকে পর্যটন শিল্পী উন্নয়ন করার বিভিন্ন রেস্ট হাউজ নির্মান করেন।

ভোলার মানুষ আজও এই মানুষটির জন্য অশ্রু মুছে,, 

শেয়ার করুন: