কাশিনাথপুরে ইসলাহুল উম্মাহ নামে ক্যাডেট মাদ্রাসার যাত্রা শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক : কাশিনাথপুরের প্রাণকেন্দ্রে কাজীরহাট রোড, হরিদেবপুরে নজরকাড়া অবস্থানে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসার শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা ও শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম উদ্বোধনের লক্ষ্যে এক মত বিনিময় সভা গতকাল শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় মাদরাসা প্রঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসার সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. মো. মোস্তাফীজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ- এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা ইসলামিয়া মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল লতিফ। এছাড়াও বৃহত্তর কাশিনাথপুর অঞ্চলের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মাদরাসার প্রধানসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাদরাসা ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয় করে প্লে গ্রুপ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির ঘোষণা দিয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, পরবর্তীতে এর পরিসর আরও বাড়ানো হবে। সেই সাথে দ্বিতীয় বছর থেকে হিফয বিভাগও চালু করা হবে।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অতিথিরা বলেন, অত্র এলাকায় অসংখ্য স্কুল-কলেজ-মাদরাসা গড়ে উঠলেও মাদরাসা শিক্ষার সাথে সাধারণ শিক্ষার সমন্বয় করে তেমন কোন প্রতিষ্ঠান এখনও গড়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসার চেয়ারম্যান ড. মুস্তাফীজুর রহমান বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির জনক মুসলমানরাই। কিন্তু মুসলমানরা কুরআন-হাদীসের চর্চা ছেড়ে দিয়ে ভুলতে বসেছে তাদের গৌরবগাঁথা সোনালি ইতিহাস। আল্লাহ তায়ালার অশেষ শুকরিয়া যে, অত্র এলাকার শিশু-কিশোরদেরকে ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে আদর্শ, চরিত্রবান ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা কতিপয় শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক একত্রিত হয়ে কাশিনাথপুরের প্রাণকেন্দ্রে কোলাহলমুক্ত এলাকায় প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি ‘ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসা’।
‘ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসা’ কোন গতানুগতিক বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়। ভবিষ্যত প্রজন্মকে কুরআন-হাদীস ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানে, শৃংখলায়, আচার-আচরণে, শরীরচর্চায়, ইসলামী সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে এবং মানবিক গুণাবলীর উৎকর্ষ সাধনে সঠিকভাবে গড়ে তোলাই এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই এই প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধির জন্য আপনাদের প্রিয় সন্তানদেরকে ভর্তি করে, পরামর্শ ও সঠিক সহযোগিতা করে আপনারাও এই মহতী কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে জানান:
ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়।
আনন্দময়, শিশুবান্ধব ও শিখন সহায়ক পরিবেশ।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম অনুসরণ।
বরেণ্য শিক্ষাবিদগণ কর্তৃক পরিচালিত।
দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা ছেলে ও মেয়েদের আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান।
শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনমুক্ত।
দেশ বরেণ্য শিল্পীদের তত্ত্বাবধানে ইসলামী সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ।
ক্লাসের পড়া ক্লাসেই তৈরি করে দেওয়া হবে।
আরবি ও ইংরেজিতে বক্তৃতা করার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
শুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষাদান।
সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দ্বারা শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ।
প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল সফটওয়্যার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের ব্যবস্থা।
জাতীয় ও আান্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলা।

মাদরাসার আরেক পরিচালক জিএম শরিফ বলেন, একজন সচেতন ও দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে আপনারা আপনাদের প্রিয় সন্তানকে নৈতিক, ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে অবশ্যই দেখতে চান। কিন্তু নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের এ যুগে সন্তানের সুশিক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন সচেতন অভিভাবক। ধর্মহীন কর্ম ও কর্মহীন ধর্ম শিক্ষা কোনোটিই আমাদের কাম্য নয়। একটি শিশুর মানসপটে নৈতিক মুল্যবোধের বীজবপন হওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে তার শৈশব ও বাল্যকাল। শৈশবে-কৈশোরে শিশুর অন্তরে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার যে বীজবপন হয়, পরবর্তী জীবনে তারই প্রতিফলন ঘটে। আর ধর্মীয় শিক্ষাব্যতীত শুধু জাগতিক শিক্ষার মাধ্যমে একটি শিশুকে কখনো নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন আদর্শ মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যায় না। একটি শিশুর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় তথা কুরআন হাদিসের শিক্ষাও সূচনা করা উচিত। প্রিয় অভিভাবক, মনে রাখবেন- সুসন্তান একটি বড় আমানত। সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া আপনার উপর ফরজ ও নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের সামান্য উদাসীনতা ও একটুখানি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সন্তানের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে। নষ্ট হয়ে যেতে পারে তার দুনিয়া ও আখিরাত। চরম মাশুল গুণতে হতে পারে আমাদের, সর্বোপরি দেশ ও জাতির। এই আমানত রক্ষার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই পথচলা শুরু হলো ‘ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসা’। আমরা আমাদের সাধ্যের সবটুকু ব্যয় করে এই মহান আমানত রক্ষায় সচেষ্ট থাকব ইনশাআল্লাহ। এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার ভিতও মজবুত করার সুযোগ গ্রহণ করুন।
কর্তৃপক্ষ ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য যাবতীয় তথ্য মিডিয়াকে জানান :
ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু : ১০ নভেম্বর ২০২২ খ্রি.।
ভর্তি কার্যক্রম : ১৫ নভেম্বর-৩১ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি.।
বই বিতরণ : ১ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি.।
ক্লাস শুরু : ৫ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি.।
অনুষ্ঠান শেষে আবির নামের এক শিক্ষার্থীকে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি করে ভর্তি কার্যক্রম শুভ উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা।
