ঈশ্বরদীতে লিচু গাছের প্রতিটি ডালে থোকায় থোকায় লিচু হলুদ-লাল রঙ্গের রুপ ধারন করেছে। এখন ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকার বাগান গুলোতে লিচু পেঁকেছে। এ বছর ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এবার ঈশ্বরদীর চাষিদের উৎপাদিত ৪০০ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হবে বলে ধারণা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। প্রতিটি লিচু গাছে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার পর্যন্ত লিচু ফলে। এবছর ঈশ্বরদীর বিখ্যাত বোম্বাই লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। রমজানের আগে প্রতি হাজার লিচু ২৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মোট ৩ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু গাছ রয়েছে। এসব লিচু বাগানে এবারও ভালো ফলন হয়েছে। ঈশ্বরদীতে সাধারনত তিন প্রজাতির লিচুর বেশি ফলন হয়ে থাকে। এগুলো হলো মোজাফ্ফর বা দেশি লিচু, বোম্বাই লিচু ও চায়না-৩ লিচু। এছাড়াও বিভিন্ন বাগানে কদমী লিচু, কাঁঠালী লিচু, বেদানা লিচু ও চায়না এক, দুই, তিন লিচুর চাষ হচ্ছে। তিন প্রজাতির লিচুর মধ্যে সবার আগে মোজাফ্ফর বা দেশি লিচু পেঁকে থাকে। তাই চাষি ও ব্যবসায়ীরা বাজারে সবার আগে দেশি লিচু নিয়ে আসতে পারে। তিন প্রজাতির লিচুর মধ্যে চাষিরা বোম্বাই ও চায়না-৩ লিচু বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। কারণ বোম্বাই প্রজাতির লিচু আকারে বেশ বড় হয়ে থাকে ও খেতে বেশ মিষ্টি লাগে। আর চায়না লিচু আকারে দেশি লিচুর পরিমান হলেও খেতে খুবই সুস্বাদু হয় এবং এর আটি ছোট হয়। উপজেলার অনেক বাগানের গাছে মুকুল না আসায় এবার লিচু ধরেনি। তবে এবার মুকুলের পরিমাণ কম হলেও আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে। ফলে এবারও লিচুর ফলন হয়েছে ভালো।
অফিস সুত্রে আরও জানা যায়, উপজেলার ছলিমপুর, সাহাপুর ও দাশুড়িয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি লিচুর আবাদ হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে লিচুর গাছ। পৌরসভা ও ইউনিয়নে প্রতিটি গ্রামে বানিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে লিচুর। আগে এক সময় এসব লিচুর জমিতে বেগুন, হলুদ, ধনিয়া, আম এবং কাঁঠাল হতো। তুলনামূলক লাভ বেশি হওয়ায় তারা দীর্ঘ ১৮-২০ বছর ধরে লিচু চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। চাষিরা জানান, নবান্নের উৎসবের মতো লিচু মৌসুমে চাষিদের মধ্যে ফুটে উঠে আনন্দ। তারা মনের আনন্দে সারা রাত জেগে লিচু গাছ পাহারা দেন। লিচু চাষি আলম সরদার জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে গাছে মুকুল আসে। তখন থেকে শুরু হয় গাছের পরিচর্যা। এসময় গাছের গোড়ায় সেচ ও সার দেওয়া হয়। মুকুল যাতে ঝড়ে না পড়ে সেজন্য গাছে ভিটামিন জাতীয় ঔষধ ছিটানো হয়। চাষিরা জানান, গাছে গুটি দেখা দিলেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসে পাইকারি লিচু ব্যবসায়ীরা। তারা প্রতিটি গাছ বাগান মালিকদের কাছ থেকে কিনে নেয়। একেকটি গাছ বিক্রি হয় ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গাছ বিক্রির পর ফল বড় হওয়া পর্যন্ত গাছের পরিচর্যা করে থাকেন ওই পাইকারী চষিরা। এরপর শুরু হয় বিক্রির পালা।
এদিকে ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর শিমূলতলা, আওতাপাড়া, বাঁশেরবাধা, সাহাপুর, দাশুড়িয়া, ভাড়ইমারী আনন্দবাজারসহ প্রভৃতি স্থানে শুধুমাত্র লিচু মৌসুমে জমে উঠেছে পাইকারী লিচুর হাট। প্রতিদিন সকালে বসছে লিচুর বিশাল হাট। এসব হাট থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০০ ট্রাক লিচু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। লিচু চাষি জিল্লু জানান, এখন হাটে প্রতিদিন লিচুর আমদানী বাড়ছে। ইতোমধ্যে হাট-বাজারে আসতে শুরু করেছে ঈশ্বরদীর জনপ্রিয় বোম্বাই লিচু। ঈশ্বরদী থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুইশত ট্রাক লিচু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গাতে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার পাইকারী ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ঈশ্বরদীর বিভিন্ন হাট থেকে লিচু কিনে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, ঈশ্বরদীর এই লিচু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে বেশ চাহিদা রয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রওশন জামাল জানান, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিচুর গাছ রয়েছে ঈশ্বরদীতে। এখানে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বানিজ্যিক হারে লিচুর আবাদ হচ্ছে। এ বছর ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। তিনি জানান প্রতিটি লিচু গাছে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার পর্যন্ত লিচু ফলে। তিনি আশা করেন, এবার ৪০০ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হবে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ঈশ্বরদীর লিচু বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমন ঘটেনি, কৃষকদের অভিজ্ঞতা ও কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাড়তি নজরদারিতে এবার লিচু বাগানে ছত্রাকজাতীয় পোকামাকড়ের উপদ্রব নেই। এসব কারণে এবার এই এলাকার লিচু চাষিরা ভালো ফলনের প্রত্যাশা করেছেন। তিনি জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে লিচু গাছের পরিচর্যা করার কারণে চাষিদের লিচু বাগানে ফলন ভালো হয়েছে।