আবদুল্লাহ আল মোহন
১. বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক ‘শেকড়ের টানে’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৪ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার সকালে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের মাধ্যমে কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো: সাবিরুল ইসলাম। তাঁরই উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক ‘শেকড়ের টানে’ কার্যক্রমের সূচনাপর্বে ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজের ৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান এবং ঘুরে ঘুরে দেখান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতীক। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরে আগারগাঁওতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীরা। আমার জন্য আজকের আয়োজনটি ছিলো আক্ষরিক অর্থেই আনন্দের, অসম্ভব অনুপ্রেরণার। কারণ আমি আমার শিক্ষকতার বিগত ১৭ বছর ধরে আনন্দময় সহশিক্ষার সৃজনশীল আয়োজন ‘মঙ্গল আসর’-এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমনতর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলাম। এবার সেটিই প্রাতিষ্ঠানিক প্রাণ পেলো বলে আমার আশাবাদ সম্প্রসারিত হলো, আস্থা গভীরতা পেলো। নতুন চালু হওয়া শিক্ষাক্রমও এমন সহায়ক শিক্ষামূলকই হবে বলেও প্রবলভাবে বিশ্বাস করি।
২. শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনাকালে কার্যক্রমের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো: সাবিরুল ইসলাম বাংলাদেশের অগণিত মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির ধারক ও বাহক হয়ে ওঠার নিরন্তর প্রচেষ্টা হিসেবে ‘শেকড়ের টানে’ কার্যক্রম শুরুর প্রেরণা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর অন্য জাদুঘরের মতো নয়, এখানে বাংলাদেশ কথা বলে- আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, গৌরব-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ-ভাবাবেগ সব কিছুর বহি:প্রকাশ ঘটেছে এখানে, হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত ইতিহাস। ঐতিহাসিক অনিবার্যতায় এই জাদুঘরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জাদুঘরটি আজ আমাদের চেতনার বাতিঘর। শিক্ষার্থীদের মাঝে এই চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা একটি নিরন্তর ধারাবাহিক কাজ। এজন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তারই অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অচিরেই ঢাকা বিভাগের সকল জেলার সর্বস্তরে ‘শেকড়ের টানে’ কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলেও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো: সাবিরুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

৩. বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দৃঢ়তা, যুদ্ধের ধংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় গৃহীত কর্মসূচি তুলে ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীর প্রতীক বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো আসলে জনযুদ্ধ। এদেশের সাধারণ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষেরা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। এই ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। এটাই এই যুদ্ধের বিশেষ দিক। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও নিজের জ্ঞান তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারাই তাঁর জীবনের বড় সার্থকতা উল্লেখ করে তিনি আহ্বান জানান, বাঙালির গৌরবের ইতিহাসকে টিকিয়ে রাখার ভার তরুণ প্রজন্মের; তাদেরকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
৪. ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের অনুকরণীয় এই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আবদুল্লাহ আল মোহন বলেন, চলতি বছর থেকে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘শেকড়ের টানে’ কার্যক্রমটি খুবই সময়োপযোগী আয়োজন হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। সারাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে এমন শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে সঠিক চেতনা বিকাশে গভীরভাবে প্রভাব ফেলবে।
৫. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনকালে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনাকালে কর্মকর্তাগণ ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের ‘শেকড়ের টানে’র অনুকরণীয় উদ্যোগকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, হাজার বছরের পরাধীনতার অর্গল ভেঙে এ জাতি জেগে উঠেছিল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে। ৩০ লাখ প্রাণ, আড়াই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে এসেছিল পরম প্রত্যাশিত স্বপ্নের সেই স্বাধীনতা। সেই মহাকাব্যিক সময়কে ধরে রাখার প্রচেষ্টাতেই তৈরি হয়েছে একটি ভবন- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দুর্লভ নিদর্শন রয়েছে এ জাদুঘরটিতে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের গৌরবময় আত্মত্যাগ অনুভব করার আদর্শ স্থান হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আর তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এই জাদুঘরে নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আসা জরুরি। সেই শুভবোধের জাগরণে ‘শেকড়ের টানে’র কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তারা।

৬. ‘শেকড়ের টানে’র উদ্যোগের জন্য ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো: সাবিরুল ইসলাম,বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতীক এবং অনন্য আয়োজনে আন্তরিক সহযোগিতা ও প্রেরণাদানের জন্য ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক ড. মো. হাননান মিঞা (সুদীপ্ত হাননান)-এর প্রতিও অশেষ কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ‘শেকড়ের টানে’র দিনব্যাপী আয়োজনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোঃ নাহিদুর রহমান,ভাসানটেক সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো: আব্দুল হাই,সহকারী অধ্যাপক কানিজ সানজানা শিমু, সহকারী গ্রন্থাগারিক শাহানা জাহানসহ সর্বপ্রকার সহযোগিতার জন্য সুপ্রিয় স্বজন পাভেল ভাই এবং রাজুর প্রতিও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
আবদুল্লাহ আল মোহন সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ভাসানটেক সরকারি কলেজ, ঢাকা ৪.১১.২০২৩
