পাবনা, ১৭ মার্চ ২০২৫:
পাবনায় সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের সংকট নিরসনে এবং স্বাধীন সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাসাস পাবনা জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় পাবনার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সমাজের নানা ক্ষেত্রের নেতৃবৃন্দ ছিলেন।
সভায় উপস্থিত বক্তারা এবং অতিথিবৃন্দ
সভায় সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক খালেদ হোসেন পরাগ, যিনি জাসাস পাবনা জেলা শাখার আহ্বায়ক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এড. শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাজহারুল ইসলাম খান পায়েল, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে ছিলেন:
- আখতারুজ্জামান আখতার, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও চ্যানেল আই ও যুগান্তরের প্রতিনিধি
- ফরিদুল ইসলাম খোকন, সাবেক সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবং অনুশীলন আশির সভাপতি
- গণেশ দাস, গণমঞ্চ নাট্যসংঘের সভাপতি
- সাইদ হোসেন দারা, লেখক ও গবেষক
আলোচনার প্রধান বিষয় ও দাবি
সভায় প্রধানত সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের সমস্যা এবং এর সমাধানে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। আলোচ্য বিষয়গুলো ছিল:
- স্বাধীনতা চত্বরের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ: সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য স্বাধীনতা চত্বরের ভাড়া ১৫০০ টাকায় পুনঃনির্ধারণের দাবি জানানো হয়।
- নতুন টাউন হল নির্মাণ: পাবনার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও সাংস্কৃতিক চাহিদার কথা বিবেচনায় নতুন টাউন হল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করা হয়।
- সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গঠন: বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের পাশে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য স্থায়ী কার্যালয়, মহড়া কক্ষ ও মিলনায়তন স্থাপনের দাবিও উঠে আসে।
- বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র উন্মুক্তকরণ: সাংস্কৃতিক কর্মীদের জন্য বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রটি সর্বদা উন্মুক্ত রাখা এবং প্রবেশের ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
- মুক্তমঞ্চ ও সাংস্কৃতিক চত্বর: পাবনার ঘোড়াস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মুক্তমঞ্চ ও সাংস্কৃতিক পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
- ক্রীড়া খাতের উন্নয়ন: জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও অন্যান্য ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে সিন্ডিকেটমুক্ত করে ক্রীড়াবিদদের প্রতিনিধিত্বমূলক কমিটি গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
- অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির পুনর্গঠন: লাইব্রেরিটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে সংস্কার এবং সর্বজনীন কমিটি গঠনের দাবি করা হয়।
- সংস্কৃতি ও ক্রীড়া খাতে সহায়তা তহবিল: দুঃস্থ শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও ক্রীড়াবিদদের সহায়তায় একটি ফাউন্ডেশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি
সভায় বক্তারা একমত পোষণ করেন যে, পাবনার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তারা জানান, এই সংকটগুলোর দ্রুত সমাধান না হলে পাবনার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া চর্চার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুতই এই সংকটগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যার মাধ্যমে পাবনা আবারও সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে তার সুনাম ও অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।