কাজী সুমন রাহাত::
রুমি বলেছিলেন, ‘ধনীদের খাবার টেবিলে, বাসনের ঝনঝনানির শব্দ যা গরিব ক্ষুধার্তের কানে পৌঁছায়।’ রুমি প্রায়ই তার অনুসারীদের নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রকৃতির মাঝে ঈশ্বর অদৃশ্য জগতের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। রুমি প্রকৃতিকে ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রতিফলন রূপে দেখতেন এবং সেখান থেকে কবিতা গজল রচনা করার অনুপ্রেরণা পেতেন। ‘মসনবী’ রুমির বিশ্ববিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। ৪০ হাজার লাইনের এই গ্রন্থ রচনা করতে সময় লাগে তার ২২ বছর। সুফিবাদের আলোচনায় যে নামটি প্রথমে উচ্চারিত হবে সেটি ‘মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি’র। যিনি ইংরেজি ভাষাভাষীদের কাছে ‘রুমি’ নামেই বেশি পরিচিত। ১৩ শতকের একজন ফার্সি সুন্নি মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, সুফী এবং অতীন্দ্রিবাদী। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি এবং বেস্ট সেলিং পয়েট বলা হয়। মওলানা রুমির সাহিত্যকর্ম বেশির ভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি তুর্কি, আরবি এবং গ্রিক ভাষায়ও রচনা করেছেন। তার লেখা ‘মসনবী’-কে ফার্সি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। আফগানরা তাঁকে আফগান আবার পারসিরা তাকে পারসিয়ান হিসেবে দাবি করে। তাঁর পারসিয়ান পরিচিতিটাই ইতিহাসবিদরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। কারণ তাঁর জন্মকালে ওই শহরটি পারস্য শাসনের অধীন ছিল এবং তিনি তাঁর সিংহভাগ সাহিত্য ফার্সি ভাষায় রচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে আমৃত্যু তিনি কোনিয়াতে কাটিয়েছিলেন। তাঁর জাতীয়তা, জন্মস্থান এসব বিষয় তাঁর বিশ্বজনীন সৃষ্টিকর্মের নিকট নেহাৎ গৌণ।১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩ সালে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির মহাপ্রয়াণ হয়। আজ তার চলে যাবার দিন। তাঁর দাফনের সময় মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদিসহ প্রায় সব ধর্মের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে তাঁর বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। রুমির কবরের এপিটাফে উজ্জ্বল হরফে লেখা রয়েছে, “যখন আমি মৃত, তখন আমাকে আমার সমাধিতে না খুঁজে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও।” ফেসবুক থেকে সংগ্রহ।