বিবিসি বাংলার তথ্য মতে গত কয়েক দিন ধরে প্রায় অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে । শুধুমাত্র গোমতী জেলায়, যে এলাকাতেই অবস্থিত গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধীন ডম্বুর জলাধার, সেই জেলায় অগাস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ১৯৬.৫ মিলিমিটার। অথচ সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ৬৫৬.৬ মিলিমিটার, যা ২৩৪% বেশি। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য দিয়েছেন । রাজধানী আগরতলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলের তলায়। হাওড়া, খোয়াই, মুহুরী ও ঢলাই সহ রাজ্যের প্রায় সব নদীই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। গত তিন দশকে এরকম বন্যা হয়নি ত্রিপুরায়। ১৯৯৩ সালের ২১শে অগাস্ট ত্রিপুরার সাব্রুমে একদিনে ২৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড ছিল। আর এ বছর ২০শে অগাস্ট একদিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩৭৫.৮ মিলিমিটার। ঠিক ৩১ বছর পরে একদিনে এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পুরো মাসের হিসাব যদি দেখি, অগাস্ট মাসের ২১ দিনে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ২১৪ মিলিমিটার। সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৩৮. ৭ মিলিমিটার, অর্থাৎ ১৫১% বেশি।
বিবিসি বাংলার তথ্য মতে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে সড়ক পথে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরের ডম্বুর হ্রদ। এখানে তীর্থমুখ ড্যাম বা ডম্বুর বাঁধ। “রাইমা আর সরমা”– এই দুটি ছোট নদী, ত্রিপুরার স্থানীয় ভাষায় যেগুলিকে বলা হয় ‘ছড়া’, এই তীর্থমুখ হ্রদে এসে মিশেছে। আবার সেখান থেকেই গোমতী নদীর উৎপত্তি। ত্রিপুরার বেশিরভাগ নদী বা ছড়ার মতোই এই গোমতীও স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের দিকে বয়ে গেছে। ওই হ্রদে প্রায় ৪৮টি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। শীতকালে ওগুলিতে অনেক পরিযায়ী পাখিও আসে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থলও। বর্ষাকালে ত্রিপুরা বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য এলাকায় অথবা বাংলাদেশের অভ্যন্তরের লাগোয়া এলাকাগুলোতে যেরকম ফ্লাড-প্লেইনস দেখা যায়, এটিও সেরকমই একটি অঞ্চল। বহু কাল ধরেই এই অঞ্চলটি তার জীববৈচিত্রের জন্য বিখ্যাত।
বিবিসি বাংলার তথ্য মতে বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেসব জেলা, তার মধ্যে আছে গোমতী। গোমতী জেলাতেই গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডম্বুর স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়েছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। কিন্তু ত্রিপুরা সরকারের বলছে অন্য কথা। তাদের মতে গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনও গেট খুলে দেওয়া হয়নি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধারটির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৯৪ মিটার। জলস্তর এর বেশি উঠলেই নিজের থেকেই জল গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। জলস্তর আবার নিচে নেমে গেলে নিজের থেকেই গেট বন্ধ হয়ে যাবে। জলস্তর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার বেশি হয়ে যেতেই জলাধারের দুটি গেট দিয়ে জল বেরোচ্ছে। এর মধ্যে একটি গেট দিয়ে ৫০% হারে জল বেরোচ্ছে। ১৯৯৩ সালে ডম্বুর জলাধারের গেট উপছিয়ে জল বেরিয়ে গিয়েছিল,আবার একই ঘটনা হলো ২০২৪ সালের অগাস্টে।