প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার
হাঁটুর ব্যথার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসাপদ্ধতি এটা। হাঁটুর ব্যথার বিভিন্ন কারণ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাঁটুর বাত বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস। গবেষণামতে, হাঁটুর ব্যথায় বিভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি, যেমন ওষুধ, সার্জারি ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়ে থাকলেও ২৫-৩০ শতাংশ মানুষ ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ হাঁটুর ব্যথা নিয়েই থাকেন। এ রোগের জন্য প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী ব্যথানাশক ওষুধ খাচ্ছেন, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অঙ্গ যেমন কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হচ্ছে।
হাঁটুব্যথার কারণ
গবেষণায় দেখা যায়, পৃথিবীর প্রায় ১৫ শতাংশ লোক, যার মধ্যে ৫৫ বছরের ওপরের মহিলারা ভীষণভাবে হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগে ভোগেন। মাসিক–পরবর্তী ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে অস্টিওপোরোসিস নামক একটি হাড়ক্ষয় রোগ হয়। যাঁদের বিএমআই (বডিমাস ইনডেক্স) বেশি, তাঁদের হাঁটুব্যথার ঝুঁকি রয়েছে।
প্রচলিত চিকিৎসা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গবেষণামতে, এখন পর্যন্ত হাঁটুর বাত রোগের চিকিৎসায় প্রচলিত যত পদ্ধতি আছে, দুর্ভাগ্যবশত তার বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে। সার্জারিকে হাঁটুর বাত বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগের সর্বশেষ চিকিৎসা মনে করা হলেও তার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যাপক। অস্টিওআর্থ্রাইটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োজন, যেখানে একজন চিকিৎসক এবং ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসাসেবা পরিকল্পনা করবেন।
যদি ৫৫-৬০ বছর বয়সের কোনো রোগীর অস্টিওআর্থ্রাইটিস নির্ণয় করা যায় তাহলে হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের ইনজেকশনের মাধ্যমে জয়েন্টের ভেতর লুব্রিকেশন করা সম্ভব। গবেষণামতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্টের সায়নোভিয়াল ফ্লুইডে হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমে গিয়ে মুভমেন্টে ব্যথার সৃষ্টি করে। বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ইনজেকশনের পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে সার্জারি প্রতিহত করা সম্ভব। ৭০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি সার্জারির ধকল অনেকাংশে সহ্য করতে পারে না এবং সার্জারি–পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়, যা মৃত্যুঝুঁকিও বাড়াতে পারে। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সার্জারি ছাড়াও হাঁটুর বাত বা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথা নিরাময় সম্ভব।
হাঁটুর ব্যথায় করণীয়
• অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শ নিন।
• তীব্র হাঁটুব্যথা হলে দুই-তিন দিনের জন্য পূর্ণ বা আংশিক বিশ্রাম নিতে পারেন।
• যেসব ক্ষেত্রে ব্যথা বাড়ে, যেমন সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা, লো কমোডে বসা, লম্বা সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
• ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা কমার জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ২০ মিনিট গরম বা ৫ অথবা ১৫ মিনিট বরফের সেঁক নিতে পারেন।
• পায়ের সামনের দিকের মাংসপেশি যেমন কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিং, সোলিয়াস, গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস, টেন্ডোন অ্যাকিলিস ইত্যাদি সফট টিস্যুর স্ট্রেচিং করতে হবে।
• হাঁটুর ওপরের মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য তিন কেজি ওজনের বালুর ব্যাগ কিনে পায়ের
গোড়ালির সামনে বেঁধে চেয়ারে বসে পা সোজা এবং ভাঁজ করতে হবে, এটি ১০-১৫ বার করে দৈনিক তিন থেকে চার বেলা করা উচিত।
• পায়ে ভারী বস্তু বেঁধে উপুড় হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করতে হবে। আগের ব্যায়ামের মতো দিনে তিন-চার বেলা করতে হবে।
• হাঁটুর নড়াচড়া হয়, এমন কাজগুলো নিয়মিত করতে হবে। চেয়ার বা কোনো কিছু ধরে ওঠা–বসার মতো হালকা ব্যায়ামগুলো করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারেন (ব্যথা কমে গেলে সিজদাহ এবং হাঁটু ভাঁজ করে নামাজ পড়া যেতে পারে)। নামাজে ওঠাবসা ও রুকুতে হাঁটুর আনেক থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ হয়ে যায়।
• সুষম ও অ্যান্টিটক্সিক খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
সুনির্দিষ্ট থেরাপিউটিক এক্সারসাইজগুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে করতে পারেন। ভুলভাবে করলে আপনার ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।