সর্দি-কাশি হলে অনেকেরই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। আবার বর্তমানে করোনাকালীন প্রায় সব রোগীর মুখেই শোনা যায় শ্বাসকষ্টের কথা।
বিভিন্ন কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। মূলত সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, হৃদরোগের কারণ, পেটের সমস্যা, গ্যাস ও হজমের সমস্যা, অ্যালার্জি, হাঁপানি, রক্তস্বল্পতা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং টেনশনে থাকলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটির জন্য দায়ী ফুসফুসের সমস্যা।
কিছু অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আবার অস্থায়ীভাবেও শ্বাসকষ্টে সমস্যা থাকতে পারে। অনেক সময় নাকে ধুলাবালি ঢোকার কারণেও মাঝেমধ্যে হালকা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এমনটি হলে খুব সহজে বাড়িতেই তা ম্যানেজ করা যেতে পারে। কিন্তু নিয়মিতভাবে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে অথবা অনেক বেশি পরিমাণে সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু ঘরোয়া টিপস—
১. শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে সামনের দিকে ঝুঁকে বসতে হবে। এটি করলে শরীর রিলাক্স হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও সুবিধা হয়। এভাবে ঝুঁকে বসার ফলে ফুসফুস ও হার্টের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। তাই শ্বাসকষ্ট হলে এ পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে হবে। এটি করার ক্ষেত্রে কোনো চেয়ারে বসে, পা মেঝের সমতলে রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকতে হবে এবং ঘাড় ও কাঁধের পেশিগুলোকে রিলাক্সে রাখতে হবে।
২. পেটের পেশিকে ব্যবহার করে গভীরভাবে শ্বাস নিলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। কোনো সমতল জায়গায় শুয়ে থেকে পেটের ওপরে হাত রাখতে হবে এবং তার পর নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে। এভাবে গভীর শ্বাস গ্রহণ করে কিছুক্ষণ ধরে রেখে শ্বাস ছাড়তে হবে। এতেই মিলবে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি।
৩. ব্রিদিং এক্সারসাইজের মধ্যে পার্সড লিপ ব্রিদিং হচ্ছে— অনেক সহজ ও কার্যকরী। উদ্বেগের কারণে কখনও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকলে এ পদ্ধতিটি অনেক বেশি কাজে আসে। এটি করতে প্রথমে ঘাড় ও কাঁধের পেশিগুলো রিলাক্স রাখতে হবে। এর পর ধীরে ধীরে নাকের মাধ্যমে শ্বাস গ্রহণ করে ২-৩ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখতে হবে এবং এ সময় মুখ বন্ধ রাখতে হবে। তার পরে ঠোঁট হালকা খুলে শিস দেওয়ার মতন করে আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে হবে ৪-৫ সেকেন্ড ধরে। এভাবে মিলবে অনেকটা স্বস্তি।
৪. স্টিম ইনহেলার নেওয়ার কারণে অনেক সময় শ্বাসনালিতে ঘন শ্লেষ্মা জমতে পারে, যেটি শ্বাসকার্যে বাধার সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে স্টিম ইনহেলেশন বা গরম ভাপ নিলে শ্বাসনালিতে জমে থাকা ঘন শ্লেষ্মা তরলে পরিণত হয়। ফলে শ্বাসনালিতে কোনো বাধা না থাকায় শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৫. ব্ল্যাক কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন শ্বাসকষ্ট হ্রাস করতে অনেক উপকারী। এ ক্যাফেইনটি শ্বাসনালির পেশিগুলোকে রিলাক্স করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে ক্যাফেইন বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।
৬. আদাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে, যেটি ফুসফুসের প্রদাহ হ্রাস করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। আদা চা অথবা হালকা গরম পানিতে আদা দিয়ে খেলে সেটি শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
৭. হলুদে অনেক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে। এটি শরীরকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে সেটি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর করে। হলুদে কারকিউমিন থাকার কারণে সেটি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া এবং হিস্টামিন নিঃসরণ বন্ধ করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ গুণাবলিগুলো থাকার কারণে হলুদ শ্বাসকষ্ট সমস্যা দূর করতে অনেক উপকারী।