নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনা বেড়ায় ৬ মাসের এলএমএএফপি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতে চেম্বার খুলে সর্বরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন কথিত চিকিৎসক সুদেব বিশ্বাস। শুধু চিকিৎসাই দেন না তিনি তার ফার্মেসীতে রোগী ভর্তি রাখেন। নিজ চেম্বারকে বানিয়ে ফেলেছেন মিনি হাসপাতাল; দেখলে মনে হবে জরুরী বিভাগ! নিয়মবহির্ভূতভাবে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চমক দেখিয়ে গ্রামীণ গরীব রোগীদের চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পুরাণভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে নগরবাড়ি ১০ শয্যা বিশিষ্ট বাসন্তি বসু স্মৃতি হাসপাতালের সামনে সুদেব বিশ্বাস নিজ বাড়িতে ‘জনসেবা চিকিৎসালয়’ নামের একটি চেম্বার খুলে দীর্ঘদিন যাবৎ রোগী দেখে আসছেন। তবে তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা। নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এতে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তবে জ¦র নিয়ে কোন রোগী চেম্বারে আসলেই ডেঙ্গু রোগী বলে ভর্তি রাখেন তার হাসপাতালে। তার চেম্বারের ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানীর প্রচুর পরিমানে ওষুধ ও কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম। রোগীদের ভর্তি রাখার জন্য পাঁচ-ছয়টি বেড (সিট) রয়েছে। রোগী প্রতি ভিজিট নেন ৩শ’ টাকা। নিজেই ওষুধ লিখে নিজ চেম্বার থেকেই ওই ওষুধ বিক্রি করেন আবার সুবিধা অনুযায়ী রোগীকে ভর্তি রাখেন নিজের চেম্বারের বেডে।

সুদেব বিশ্বাসের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসা ময়সার আলী জানান, ‘আমি লোকমুখে শুনে চরকল্যাণপুর থেকে জ¦র নিয়ে এখানে ডাক্তার দেখাতে আইছি। ডাক্তার সাহেব নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাকে বলেছেন, আমার ডেঙ্গু হয়েছে। তাই আমাকে ভর্তি করে স্যালাইন দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার তো মনে হয় না আমার ডেঙ্গু হইছে এহানে আইসাইতো ফাইসা গেলাম।’
নগরবাড়ি বসন্তপুরের বাসিন্দা আজগর আলী জানান, ‘পাশের সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না। এজন্য বাধ্য হয়ে মানুষ এই পল্লী চিকিৎসকের চিকিৎসা নেন। এখানে যে কোন রোগী আসলেই এই ডাক্তার তাকে কোন রকম পরীক্ষা ছাড়াই স্যালাইন দিয়ে বেডে শুয়ে রাখে।’ তবে এই কথিত ডাক্তার সুদেব বিশ্বাসের চেম্বারে প্রচুর রোগী আসেন বলে তিনি জানান।
পল্লী চিকিৎসক সুদেব বিশ্বাস বলেন, ‘আমি বিধি মোতাবেক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছি।’ পল্লী চিকিৎসক হয়েও ডাক্তার পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে ভালো সেবা দেই, তাই আমাকে সবাই ডাক্তার বলে ডাকে। আমার মত অনেক পল্লী চিকিৎসক ডাক্তার পরিচয় দেয়, আমি দিলে সমস্যা কী?’ পল্লী চিকিৎসক হিসেবে তার বৈধ কাগজপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই ভুয়া পল্লী চিকিৎসকরা বিভিন্নভাবে সাধারণ রোগীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এবং প্রতারণা বন্ধ করার জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ওপর জোর দাবি জানান তারা। স্থানীয়রা আরও জানান, প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে অনুমোদন ছাড়াই নিজ চেম্বারকে হাসপাতাল বানিয়ে নিয়েছেন তিনি।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পল্লী চিকিৎসকরা এমন অনিয়ম করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে সচেতন মহলের দাবি।
এই বিষয়ে একাধিক ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পল্লী চিকিৎসকদের জন্য টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের গিফট দেয়া হয়। এজন্যই তারা আমাদের কোম্পানীর এন্টিবায়োটিক ওষুধ লিখে দেন রোগীদের। আর এই গিফট দিয়ে ওষুধ লেখার জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়ে মার্কেটে কাজ করতে হয় আমাদের।

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা ইউ.এই এন্ড এফপিও ডা. ফাতেমা তুজ জান্নাত বলেন, ‘এল.এম.এ.এফ.পি এটা কোন ডিগ্রিী নয়। এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারেন না। ওই পল্লী চিকিৎসকের বিষয়ে আমি শুনেছি। আমি ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিব।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদ ইসলাম বলেন, ‘এ উপজেলায় আমি নতুন যোগদান করেছি। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’