প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার : মেরুদণ্ড হল পুরো শরীরের ভিত্তি। নিয়মিত শরীরচর্চা আর শারীরিক নড়াচড়া সবল মেরুদণ্ডের মুলমন্ত্র। তাই ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ে পরামর্শ মোতাবেক সকলের উচিত দৈনিক নুন্যতম ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা।”
মেরুদণ্ডের ব্যথা। মেরুদণ্ডের ব্যথা বলতে বোঝায় ঘাড়, কোমর ও পিঠে ব্যথা। পৃথিবীজুড়ে ৪০–৫০ ভাগ মানুষ এই ব্যথায় ভোগেন।
সাধারণ মানুষই হোক কিংবা সেলেব্রিটি। বিশেষ করে শিরদাঁড়ায় ব্যথা হলে হাঁটাচলা বা স্বাভাবিক কাজকর্ম করাও মুশকিল হয়ে ওঠে।
মেরুদণ্ডের ব্যথার বিভিন্ন কারণের মধ্যে আছে স্লিপ ডিস্ক, যার ডাক্তারি নাম ‘ডিস্ক হার্নিয়েশন’। অতিরিক্ত লম্বা এবং অত্যন্ত বেঁটে চেহারার পুরুষদের মধ্যে স্লিপ ডিস্কের ঝুঁকি বেশি, বললেন গবষেকগন। স্লিপ ডিস্কের আর এক রিস্ক ফ্যাক্টর ওবেসিটি অর্থাৎ বাড়তি ওজন। মূলত মেরুদণ্ডের তলার দিকের দু’টি হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্ক স্লিপ করে বেরিয়ে এসে স্নায়ুতে চাপ দিলেই ভয়ানক ব্যথার সূত্রপাত হয়, চিকিৎসা না করালে ব্যথার প্রকোপ বাড়তেই থাকে।
ডিস্ক পিছলে গেলে প্রথম এবং প্রধান উপসর্গ হল ব্যথা। অবশ্য কখনও কখনও সামান্য ব্যথাও স্লিপ ডিস্কের উপসর্গ হতে পারে। অল্প ব্যথা অগ্রাহ্য করলে পরে ভোগান্তির মাত্রা বাড়ে, এ ব্যাপারে দুই চিকিৎসকের একই মত। কোমর থেকে পায়ের দিকে বা ঘাড় থেকে হাতে ব্যথা নেমে আসে, ঝিনঝিন করে। শুরুতে অল্প অল্প ব্যথা যা পরের দিকে অসহ্য হয়ে দাঁড়ায়। কত তীব্র ব্যথা হবে তা নির্ভর করে ডিস্কের মধ্যের জেলি কতটা বেরিয়ে এসেছে আর নার্ভ রুটকে কীভাবে চাপ দিচ্ছে, তার উপর।
সুদীপ্তবাবু জানালেন, ঘাড় আর কোমরের অংশে বেশি নড়াচড়া হয় বলে এই দুই অংশেই ডিস্ক হার্নিয়েশনের সম্ভাবনা বেশি। ঘাড়ে সমস্যা হলে ব্যথা কাঁধ হয়ে হাত পর্যন্ত পৌঁছয় আর কোমরে সমস্যা হলে ব্যথা বা ঝিনঝিন ভাব পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কখনও কখনও হাত পায়ের জোর কমে যেতে পারে। সুদীপ্ত ঘোষ বললেন যে, অনেক সময় বিশেষ কিছু নার্ভে চাপ দেওয়ায় মলমূত্র ত্যাগেও অসুবিধা হতে পারে।
ইনকন্টিনেন্স অর্থাৎ প্রস্রাব বা মল ধরে রাখতে অসুবিধা হয়। শৌচাগার যাওয়ার আগেই পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় প্রচণ্ড বেগ এলেও প্রস্রাব আটকে গিয়ে বিপত্তি হতে পারে। তাই কোনও ব্যথা বেদনা হলে নিজেরা পেইন কিলার না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
ছেলেদের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি
যে কোনও বয়সেই ডিস্ক প্রোলাপ্স হতে পারে। তবে ছেলেদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। সাধারণত ৩০ থেকে ৫৫ বছর বয়সি মানুষের স্লিপ ডিস্কের সম্ভাবনা থাকলেও পুরুষদের মধ্যে এই অসুখের ঝুঁকি বেশি। মেয়েদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সমস্যা দেখা যায় পুরুষদের মধ্যে, বলছেন গবেষকগন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৪০ উত্তীর্ণদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। আর যাঁরা নাগাড়ে বসে ডেস্ক ওয়ার্ক করেন বা যাঁদের ভারী জিনিস তুলতে হয়, তাঁদেরও ঝুঁকি বেশি। নিয়মিত শরীরচর্চা করে পিঠ ও কোমরের পেশি শিক্তিশালী রাখতে পারলে এই সমস্যার ঝুঁকি কমানো যায়
ওয়েট বিয়ারিং এক্সারসাইজ সাবধানে করুন
সামনে ঝুঁকে ভারী জিনিস তোলা স্লিপ ডিস্কের অন্যতম কারণ। জিমে গিয়ে অনেকেই এই কাজটি করেন ও ডিস্ক হার্নিয়েশনের সমস্যায় ভোগেন। এছাড়া বেকায়দায় পড়ে গিয়ে চোট, বাসে, অটোতে বা রিকশাতে আচমকা জোর ঝাঁকুনি, অতিরিক্ত কায়িক শ্রম, ভারী জিনিসে শরীরচর্চা ইত্যাদি নানা কারণে ডিস্ক হার্নিয়েশনের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া নাগাড়ে বসে থাকলে আর মোটাসোটা চেহারা অর্থাৎ বাড়তি ওজনও স্লিপ ডিস্কের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে শুয়ে বসে অলস জীবন কাটালে মেরুদণ্ডের আশপাশের পেশি দুর্বল হয়ে গিয়ে কশেরুকার মাঝের কুশন বেরিয়ে আসতে পারে।
চিকিৎসা মানেই সার্জারি নয়
অনেকের ধারণা স্লিপ ডিস্ক হলেই সার্জারি করানো মাস্ট। এই ধারণা ঠিক নয়—।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কনজারভেটিভ চিকিৎসায় স্লিপ ডিস্ক সারিয়ে তোলা যায় (৮০% থেকে ৯০%) । কিছু কিছু ক্ষেত্রে (১০% থেকে ২০%) সার্জারি করাতে হয়। ছয় থেকে আট সপ্তাহ কনজারভেটিভ চিকিৎসা করার পরেও রোগ না সারলে সার্জারির কথা ভাবতে হয়। লাম্বার মাইক্রোডিস্টেক্টমি সার্জারির সাহায্যে মেরুদণ্ডের এই ভয়ানক ব্যথা সারানো হয়।
মাস্কুলোস্কেলিটাল বিশেষজ্ঞ
লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার
পান্থপথ, ঢাকা।
০১৭৬৫ ৬৬ ৮৮ ৪৬