এবিসি বার্তা

শনিবার ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ৩ জুন ২০২৩

প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার : একজন মানবতার ফেরিওয়ালা

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on email

প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার : একজন মানবতার ফেরিওয়ালা

প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার : একজন মানবতার ফেরিওয়ালা

আলাউল হোসেন : বাঙালি জাতি যেসব কীর্তিমান সন্তানকে নিয়ে গর্ব করতে পারে, প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার তাদেরই একজন। সব্যসাচী এ কর্মবীর মানুষটি জীবনের প্রতিটি কাজে রেখেছেন অসাধারণ অবদান। জীবনের প্রথম থেকেই তিনি রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সত্তর বছর বয়সে এসেও তাঁর সেই তারুণ্যের দ্যুতি ছড়িয়েই যাচ্ছেন। কর্মগুণে খুব সহজেই আজ তিনি সারাদেশের মানুষের প্রিয়জন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এলাকায় অসহায়, গরিব, দুখী মানুষের জন্য কাজ করার অভ্যাস তাঁর ছোটবেলাতেই গড়ে ওঠে।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বের বাইরের মানুষ হয়েও যে জনসেবায় নজির স্থাপন করা যায়, প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার তার জ্বলন্ত উদাহরণ। নিজ এলাকায় অসহায়, গরিব, দুখী মানুষের জন্য যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। কেবল আন্তরিক ও প্রাণবন্ত ব্যবহার দিয়েই নয়, অর্থ-মেধা-শ্রম দিয়েও মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়েছেন; সকলের মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসাব্যবস্থাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। এলাকার উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বেড়ায় অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক বরাদ্দকৃত প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে যে ডায়াবেটিস হাসপাতাল নির্মাণাধীন রয়েছে, তাঁর জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ০.১৪ একর জায়গা দান করেছেন তিনি।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার ব্যক্তিত্ব প্রফেসর আলতাফ সরকার সকল ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মানুষের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়। মানবতাই তাঁর কাজ ও ধর্ম। তাঁর মাঝে নেই কোন অহঙ্কার। তিনি প্রতি দুই মাস অন্তর নিজ জন্মস্থান বেড়ায় ফ্রী স্বাস্থ্য ক্যাম্পের মাধ্যমে শতশত রোগীকে সেবা দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন। আর এ কাজটি তিনি যুগযুগ ধরে করে আসছেন। এছাড়া ফেসবুক, ইউটিউব ও দূরদর্শনের মাধ্যমে লক্ষ কোটি মানুষের কাছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন।
আলাপকালে ফ্রী চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেড়ার সন্তান হিসেবে নিজ অঞ্চলের মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে আমি নিজেও গর্বিত। স্বানন্দে ও ভালোবাসা থেকেই এধরনের আয়োজন করে থাকি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমার এলাকার মানুষ তাদের শারীরিক জটিলতা নিয়ে আমার কাছে নির্দ্বিধায় আসতে পারেন। আমার ফিজিওথেরাপি সেন্টার আমার এলাকার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। আমার পুরো টিম ব্যথাবেদনার রোগীদের যতœ নিতে সদা প্রস্তুত।’
প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবনে তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য রাজপথের সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেন। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করে দেশ স্বাধীন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মার্চ এপ্রিলেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৭ নং সেক্টরের কর্নেল নুরুজ্জামানের অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন; তার লাল মুক্তিযোদ্ধা বার্তা- এফ.এফ. নম্বর- ০১৩১১০৫০০৯৮ বাংলাদেশ, আই.ডি নং/বারকুট কোড- ০৫০৪০৬০০২৭, গেজেট নং- ১৪৮৬ এবং সনদপত্র নং- ম ২০৮৩৬।
উল্লেখ্য, প্রফেসর ডা. আলতাফ হোসেন সরকার ১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার শম্ভুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ আবু হোসেন সরকার একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে একনাগাড়ে ১৯৫০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। আবু হোসেনের বাড়ির খানকাঘর ছিল গরিব অসহায় ছাত্রদের আশ্রয়স্থল। মাতা নূরজাহান বেগম ছিলেন বিচক্ষণ গৃহিণী।
তিনি পাবনার বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। এরপর বেজে ওঠে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের দামামা। কিশোর বয়সেই তিনি একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হলে রাজশাহী কলেজ থেকে বেড়া কলেজে ট্র্যান্সফার হন এবং ১৯৭৩ সালে ওই কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮২ সালে প্রফেসর ডা. আলতাফ হোসেন সরকার জিম্বাবুয়েতে চাকরি করার জন্য আফ্রিকা গমন করেন এবং চাকরির ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেন। ১৯৯৯ সালে মাস্টার্স ইন ফিজিওথেরাপি এবং ২০০০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি মেকানিক্যাল ডায়গনসিস ও থেরাপি (স্পাইন), বাওয়ান টেকনিক, অর্থোপেডিক মেডিসিন-সিরিয়াক্স, অ্যাডভান্স জেনারেল মেডিসিন ক্লিনিক্যাল নিউরো ডায়নামিক্স, ভিসারাল ম্যানুপুলেশন, মায়োফেসিয়াল রিলিজ, পজিশনাল রিলিজ-এ উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
প্রফেসর আলতাফ হোসেন-এর ব্যাকপেইন চিকিৎসার ওপর লেখা অসংখ্য গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা বই পাঠক সমাজে ও চিকিৎসকদের মাঝে বেশ সমাদৃত হয়েছে। প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরীক্ষক ও শিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা-উপদেষ্টা। বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন সেন্টার ফর ডিসেবল এবং ফিজিওথেরাপি রিভিউ (প্রথম ফিজিওথেরাপি পত্রিকা)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ, বাংলাদেশ নর্থবেঙ্গল ওয়েলফেয়ার সমিতি, ঢাকাস্থ পাবনা সমিতি এবং লায়ন ফাউন্ডেশনের জীবনসদস্য। এছাড়াও তিনি অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফিজিওথেরাপি প্রফেশনাল সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং গবেষণা প্রবন্ধ পাঠ করেন এবং ফিজিওথেরাপি প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। তিনি অসহায় অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফি হেল্থ ক্যাম্প করেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনে প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে থাকেন এবং বাংলাদেশ বেতারে সাক্ষাৎকার দেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং উপদেশ সম্বলিত বিভিন্ন রোগের ওপর তাঁর লেখা প্রবন্ধ দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে থাকে। এছাড়াও তিনি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক-এ লাইভ প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন ফিজিওথেরাপি “এ মেডিসিন টুডে অ্যান্ড টুমরো”। স্পাইন চিকিৎসায় কীভাবে অপারেশন ছাড়াই স্পাইনের রোগ চিকিৎসা করা যায়- এ বিষয়ে তিনি অপরিসীম সাফল্য অর্জন করেছেন। যেমন- একটি সঠিক এক্সারসাইজ তাৎক্ষণিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সে জন্য তিনি বলেন- “সঠিক এক্সারসাইজ ইজ এ পেইনকিলার’।” মাথাব্যথা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জনক হিসেবেও তিনি সমধিক পরিচিত। এই অনন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে ২০০২ সালে বাংলা সাংস্কৃতিক পরিষদ কর্তৃক ‘বিশেষ পদক’ এবং ২০১০ সালে ‘অতীশ দীপঙ্কর গোল্ডমেডেল’ প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশের সর্বজন পরিচিত ও গুণী ব্যক্তিত্ব বেতারকণ্ঠ খ্যাত নাজমুল হুসাইন এ প্রতিনিধিকে জানান, ‘প্রায়ই ঢাকার পান্থপথে যাওয়া-আসার সময়, ডা. আলতাফ সরকারের চেম্বার খুঁজি! আমার দেখানো প্রথম ফিজিওথেরাপিস্ট, ঢাকার মৌচাকের চেম্বারে! তাঁর সেবা পেয়েছি প্রায় ১২ বছর আগে; আমি আর আক্রান্ত হইনি স্পন্ডেলাইসিস-এ; তাঁর দেখানো হালকা ব্যায়াম করেই সুস্থ হয়ে যাই!’
দীর্ঘদিন ধরে জনসেবায় আত্মনিয়োগ করা ডা. আলতাফ সরকারের কর্মকা-ের ভূয়সী প্রশংসা করে বিবৃতি দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. লিয়াকত হোসেন, সাঁথিয়া বোয়ালমারী কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কাশীনাথপুরের ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসার সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. মুস্তাফীজুর রহমান খান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসাইন, ঢাকাস্থ স্কুল অব দ্য নেশন এর সম্মানিত পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডিরেক্টর মাইন এ রাজ্জাক, ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক কোরবান আলী, বেড়ার মাশুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আলাউল হোসেন প্রমূখ।
ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার দেখা কয়েকজন আত্মত্যাগী মানুষের মধ্যে প্রফেসর আলতাফ সরকার স্যার অন্যতম। তিনি এলাকার মানুষের ফ্রী স্বাস্থ্য সেবা দেন শুধু তাই নয়, এলাকায় আসলে নিজে বাজার থেকে মাছ-মাংস-তরিতরকারি-চাল-ডাল কিনে অসহায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দেন। তাঁর এলাকার শতশত অসহায় শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করে চলেছেন। তাঁর কাছে গিয়ে কেউ কোনদিন খালি হাতে ফিরে আসেনি।’
আলাউল হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা একটি অনন্য শিল্প। একে প্রায়োগিকভাবে রপ্ত করতে হয়। জানতে হয় বিস্তর। আত্মস্থ করতে হয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে। সব কাজের মধ্যে যেমন প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণি আছে, তেমনি চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যেও তাই। সবকিছু ছাপিয়ে চিকিৎসকের উত্তম ব্যবহার, হাতের যশ, রোগ নির্ণয়, তার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োগ, চিকিৎসার অনাবিল মুন্সিয়ানা হয়ে উঠে সোনালি। প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার স্যার এমনই একজন মানুষ। বস্তুত তাঁর তুলনা কেবল তাঁর সাথে চলে।’
ড. লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘তিনি ব্যক্তিগতভাবে পরোপকারী। তিনি চিকিৎসক হিসেবে যে মানবিক নজির স্থাপন করেছেন, তা এলাকার মানুষের হৃদয়ের মণি কোঠায় ভাস্বর। তাছাড়া তিনি এলাকার মানুষ, অসহায়, নিঃস্বদের কাছ থেকে কখনো চিকিৎসা ফি নেন না। নিজেকে এই পথে বিলিয়ে দিয়েছেন।’
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রফেসর আলতাফ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘চাচা বীরমুক্তিযোদ্ধা তাহেজ আলী সরকার তখন প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে অবস্থান করছিলেন। তিনি একটি চিঠি লিখেন আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে যাবার জন্য। চিঠিটা বহন করে আমাকে পৌঁছে দেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসহাক আলী। উক্ত পত্র পেয়ে আমরা ১৫-১৬ জন প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে রওনা হই। তিনি আরও বলেন, রিসিভশন ক্যাম্প ছিলো একটি ট্রেনিং ক্যাম্প। যার দায়িত্বে ছিলেন সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। রাত্রিতে ক্যাম্পে পৌঁছালে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি হলো না আমাদের; ফলে ক্যাম্পের বাইরে বেঞ্চের উপর শুয়ে-বসে রাত কাটালাম। পরদিন সকালে আমাদেরকে ক্যাম্পে নাম লেখানো ও প্রয়োজনীয় কাজ শেষে কয়েকদিন ট্রেনিং হলো। এখানে ট্রেনিং শেষে আমাদেরকে হায়ার ট্রেনিং- এ পাঠানো হলো। অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ক্যাম্পে যথেষ্ঠ পরিমাণে খাবারের ব্যবস্থা ছিলো। উনার এক ভাগিনা ছিলেন নাম বাঘা, রাজশাহী মেডিকেলের ছাত্র ছিলেন। তিনি আমাদেরকে অনেক যতœ করেছেন বেড়ার মানুষ হিসেবে। তখন আবু সাইয়িদ সাহেব আামাদেও বেড়া-সাঁথিয়া ও সুজানগরের MNA (Member of National Assembly) তিনি আমাদের উচ্চতর ট্রেনিং-এর জন্য পাঠালেন। প্রশিক্ষণ শেষে আমি সোজা চলে আসলাম তাহেজ চাচার বাসায়। চাচা তখন সপরিবারে স্ত্রী ৪ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে পাঁচবিবি বর্ডারের একটি হিন্দু বাড়িতে থাকতেন। বাড়িটি ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। সেখানে অবস্থান করে আমরা বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিতাম।’
কথাপ্রসঙ্গে এই প্রতিবেদককে প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার বলেন, ‘এলাকার সবার ভালোবাসায়, মা-বাবার অসীম দোয়ায় আজ আমি একজন চিকিৎসক। মানুষের বিপদ-আপদে দুর্দিনে পাশে থাকা আমার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমার নামের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল আছে। আমার চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে সাথে থাকুন, আপনার যে কোন সমস্যার সমাধান ভিডিও’র মাধ্যমেই পেয়ে যাবেন। আমার চেম্বারে এসে চিকিৎসা নিতে হবে না। তাছাড়া আমি প্রতি সপ্তাহে ফেসবুক লাইভে এসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিনামূল্যে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকি, আমার ফেসবুক পেইজে ফলো করে সাথে যুক্ত থাকতে পারেন।’
দেশের ডাক্তারদের সম্পর্কে ব্যাপক অভিযোগ। সব ডাক্তার সঠিক চিকিৎসা দেন না। কোনো কোনো ডাক্তার রোগীদের চিকিৎসা ও মানসিক ভরসা দেন। প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার এমনই একজন যিনি চিকিৎসাও দেন, আবার রোগীকে মানসিক ভরসাও দেন। এরকম একজন মানবিক চিকিৎসকের সুস্থ-দীর্ঘজীবন কামনা করে প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেন অগণিত ভক্ত।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on email