নিজস্ব প্রতিবেদক : উপমহাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত ফিজিওথেরাপিস্ট এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডক্টর আলতাফ হোসেন সরকার গত ৭ ও ৮ ডিসেম্বর দুই দিন ব্যাপী পাবনার বেড়ায় ও কাশীনাথপুরে ব্যথার রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেড়া টাউন ক্লাবে ৭ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত আড়াইশ’ রোগীকে এবং পরের দিন ৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাশীনাথপুরের কাজীরহাট রোডে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসা প্রাঙ্গণে ১৬০ জন রোগীকে ব্যথার চিকিৎসা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, প্রফেসর ড. আলতাফ হোসেন সরকার ১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার শম্ভুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা আলহাজ আবু হোসেন সরকার একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে একনাগাড়ে ১৯৫০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন । আবু হোসেনের বাড়ির খানকাঘর ছিল গরিব অসহায় ছাত্রদের আশ্রয়স্থল। মাতা নূরজাহান বেগম ছিলেন বিচক্ষণ গৃহিণী।
প্রফেসর ড. আলতাফ হোসেন সরকার বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়, পাবনা থেকে ১৯৭০ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এরপর বেজে ওঠে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের দামামা। তিনি একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হলে প্রফেসর ড. আলতাফ রাজশাহী কলেজ থেকে বেড়া কলেজে ট্র্যান্সফার হন এবং ১৯৭৩ সালে ওই কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮২ সালে প্রফেসর ড. আলতাফ হোসেন সরকার জিম্বাবুয়েতে চাকরি করার জন্য আফ্রিকা গমন করেন এবং চাকরির ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেন। ১৯৯৯ সালে মাস্টার্স ইন ফিজিওথেরাপি এবং ২০০০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি মেকানিক্যাল ডায়গনসিস ও থেরাপি (স্পাইন), বাওয়ান টেকনিক, অর্থোপেডিক মেডিসিন-সিরিয়াক্স, অ্যাডভান্স জেনারেল মেডিসিন ক্লিনিক্যাল নিউরো ডায়নামিক্স, ভিসারাল ম্যানুপুলেশন, মায়োফেসিয়াল রিলিজ, পজিশনাল রিলিজ-এ উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
প্রফেসর আলতাফ হোসেন-এর ব্যাকপেইন চিকিৎসার ওপর লেখা অসংখ্য গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে । তাঁর লেখা বই পাঠক সমাজে ও চিকিৎসকদের মাঝে বেশ সমাদৃত হয়েছে। প্রফেসর ড. আলতাফ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরীক্ষক ও শিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা-উপদেষ্টা। বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন সেন্টার ফর ডিসেবল এবং ফিজিওথেরাপি রিভিউ (প্রথম ফিজিওথেরাপি পত্রিকা)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ, বাংলাদেশ নর্থবেঙ্গল ওয়েলফেয়ার সমিতি, ঢাকাস্থ পাবনা সমিতি এবং লায়ন ফাউন্ডেশনের জীবনসদস্য। এছাড়াও তিনি অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন ।
প্রফেসর ড. আলতাফ সরকার বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফিজিওথেরাপি প্রফেশনাল সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং গবেষণা প্রবন্ধ পাঠ করেন এবং ফিজিওথেরাপি প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। তিনি অসহায় অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্রি হেল্থ ক্যাম্প করেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনে প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে থাকেন এবং বাংলাদেশ বেতারে সাক্ষাৎকার দেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং উপদেশ সম্বলিত বিভিন্ন রোগের ওপর তাঁর লেখা প্রবন্ধ দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে থাকে। এছাড়াও তিনি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক-এ লাইভ প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
প্রফেসর ড. আলতাফ সরকার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন ফিজিওথেরাপি “এ মেডিসিন টুডে অ্যান্ড টুমরো”। স্পাইন চিকিৎসায় কীভাবে অপারেশন ছাড়াই স্পাইনের রোগ চিকিৎসা করা যায়- এ বিষয়ে তিনি অপরিসীম সাফল্য অর্জন করেছেন। যেমন- একটি সঠিক এক্সারসাইজ তাৎক্ষণিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সে জন্য তিনি বলেন- “সঠিক এক্সারসাইজ ‘ইজ এ পেইনকিলার’।”মাথা ব্যথা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জনক হিসেবেও তিনি সমধিক পরিচিত। এই অনন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে ২০০২ সালে বাংলা সাংস্কৃতিক পরিষদ কর্তৃক ‘বিশেষ পদক’ এবং ২০১০ সালে ‘অতীশ দীপঙ্কর গোল্ডমেডেল’ প্রদান করা হয়।
আলাপকালে ফ্রী চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, বেড়ার সন্তান হিসেবে নিজ অঞ্চলের মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে আমি নিজেও গর্বিত। স্বানন্দে ও ভালোবাসা থেকেই এধরনের আয়োজন করে থাকি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমার এলাকার মানুষ তাদের শারীরিক জটিলতা নিয়ে আমার কাছে নির্দ্বিধায় আসতে পারেন। আমার ফিজিওথেরাপি সেন্টার আমার এলাকার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। আমার পুরো টিম ব্যথাবেদনার রোগীদের যত্ন নিতে সদা প্রস্তুত।
বাংলাদেশের সর্বজন পরিচিত ও গুণী ব্যক্তিত্ব বেতারকণ্ঠ খ্যাত নাজমুল হুসাইন এ প্রতিনিধিকে জানান, প্রায়ই ঢাকার পান্থপথে যাওয়া-আসার সময়, আলতাফ ভাইয়ের চেম্বার খুঁজি! আমার দেখানো প্রথম ফিজিওথেরাপিস্ট, ঢাকার মৌচাকের চেম্বারে! তাঁর সেবা পেয়েছি প্রায় ১২ বছর আগে; আমি আর আক্রান্ত হইনি স্পন্ডেলাইসিস-এ; তাঁর দেখানো হালকা ব্যায়াম করেই সুস্থ হয়ে যাই!
দীর্ঘদিন ধরে জনসেবায় আত্মনিয়োগ করা ড. আলতাফ সরকারের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে বিবৃতি দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. লিয়াকত হোসেন, বোয়ালমারী কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কাশীনাথপুরের ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসার সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. মুস্তাফীজুর রহমান খান, শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসাইন, ঢাকাস্থ স্কুল অব দ্য নেশন এর সম্মানিত পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম, জিএম শরীফ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডিরেক্টর মাইন এ রাজ্জাক, ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক কোরবান আলী, ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালের ম্যানেজার মারুফ চৌধুরী, স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান আলাউল হোসেন, ইসলাহুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হাকিম প্রমূখ।