১.
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে বই পড়ার অভ্যাস ও মুক্ত আলোচনা-পাঠচক্র পরিচালনার বিষয়ে তাঁর ধারণাগুলো অনুভব করতে পারি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিভিন্ন পাঠচক্রের সদস্য থাকার সক্রিয় অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেও একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাঠপ্রবণতার, চিন্তাচর্চার প্রয়োজনীয়তাও তীব্রভাবে অনুধাবন করি। স্মরণ করতে পারি, ‘নিস্ফলা মাঠের কৃষক’ সায়ীদ স্যারের মূল্যায়ন, তিনি যেমনটি বলে থাকেন,‘মানুষ চিরদিন অতৃপ্ত। সমৃদ্ধি কখনও চট করে এক দিনে আসে না। বই পড়ার ক্ষমতা একটা বিশেষ ক্ষমতা। এটা থাকে সামান্য লোকের ভিতর। যে বই মানুষকে বড় করে তোলে বড় কিছুর জন্য অর্থাৎ স্বপ্নের জন্য প্রসারিত করে সেই বই এত সহজ না। বই সংস্কৃতির পতাকা বহন করে।’ সায়ীদ স্যারের সেই চেতনাকে বাস্তবায়নে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। শুরু হয় সেকায়েপ কার্যক্রমের। আমাদের বই পাঠ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেকায়েপ প্রকল্পের মাধ্যমে এটা আরও সমৃদ্ধ করছে বলেও মনে করেন সায়ীদ স্যার। আর সেই সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ারই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় শিক্ষাঙ্গণ ভাসানটেক সরকারি কলেজেও শুরু হলো পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
২.
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ স্যার এসেছিলেন আমাদের কলেজের একটি অনুষ্ঠানে। সেদিন শেখ রাসেল দেয়ালিকা কর্ণারে দাঁড়িয়ে আলাপনকালে স্যারের কাছে কলেজের পাঠাগারের জন্য বইয়ের প্রত্যাশার করলে, তিনি পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে পরিচালনার উপর জোর দেন,অনুপ্রাণিত করেন। তাৎক্ষণিকভাবেই মহাপরিচালক স্যারের সেই প্রত্যাশার ইতিবাচক সাড়া দেন আমাদের প্রিয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন। সেই প্রক্রিয়ায় অধ্যক্ষ মহোদয়ের নির্দেশনায় প্রচেষ্টার বীজটি শিক্ষার্থীদের সজীব প্রাণময় স্বপ্নমাঠে রোপিত হলো, অভিযাত্রা শুরু হলো আজ আমাদের পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের শুভ সূচনার মাধ্যমে। আজ ৩০ জুন ২০২২ বেলা ১২টার সময় কলেজের স্বাধীনতা মিলনায়তনে কার্যক্রমের অনাড়ম্বর কিন্তু প্রাণপ্রাচুর্যময় আয়োজনে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন। আজকের আয়োজনে সূচনা বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: আব্দুল হাই, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কলেজ গ্রন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: বজলুর রহমান রফিক,বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এবং বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আতিয়া খন্দকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মোহন। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন কমিটির সদস্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোছা:আশরাফুন্নাহার।
৩.
আলোচনাকালে অতিথিবৃন্দ বলেন,বই এমন একটা সম্পদ, যা একবার পড়া শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভাল লাগে না, বই ছেড়ে ওঠা যায় না। অতীতের সঞ্চিত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বইয়ের জ্ঞান মানুষের নৈতিকতার শিক্ষা দান করে, মানবিক ও যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করে। আর এই পাঠের প্রতিক্রিয়ায় মূল্যবোধসৃষ্টি ও বিকশিত হয়, যে নৈতিকতার মাধ্যমেই নবীন প্রাণে আসে সুশিক্ষার আলো-বাতাস। তাই সকলের মাঝে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির মাধ্যমে মুক্তচিন্তার চর্চার এবং নৈতিকতার শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে বলে সকলে মনে করেন। তাঁরা বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোনো ভাল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব না, আর এটার অন্যতম দায়িত্ব শিক্ষার সাথে জড়িত সকলের, প্রধান ভূমিকা থাকে শিক্ষকদের। বই পাঠ আমাদের স্বপ্নভূবন সৃষ্টি যেমন করে, তেমনি রাখে হতাশামুক্ত। সাম্প্রতিককালের কিছু বিষয় তুলে ধরে তারা জানান, নানা কারণে যখন আমাদের মন হতাশায় আক্রান্ত ঠিক সেই সময় পাঠাভ্যাস উন্নয়নে এই আয়োজন সেই জায়গায় কাজ করবে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আশাবাদের আলো জ্বালাতে। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির এই উদ্যোগ সাফল্য লাভ করবে বলে সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সৃজনশীল বই পড়ার পাশাপাশি আমাদেরকে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সেই সঙ্গে জীবন দক্ষতার শিক্ষাটাও অর্জন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে কলেজ পাঠাগার নিয়মিত ব্যবহারের প্রতি সকলে জোর দেন। আজকের এই আয়োজনে কলেজের ৭২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। পর্যায়ক্রমে কলেজের সকল শিক্ষার্থীর অংশীদারিত্ব পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কার্যক্রমে নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়।
আবদুল্লাহ আল মোহন
৩০ জুন ২০২২