Friday, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে মমতার বাধা

g barrage
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজে নির্মাণে বাদ সেধেছেন। মমতার বিরোধিতায় ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করাও এখনও সম্ভব হয়নি। ঢাকা দিল্লী ঐকমত্যে পৌঁছালেও মমতার বাগড়ায় ভেস্তে গেছে সেই উদ্যোগ। এখন আবার গঙ্গা ব্যারাজের বিষয়েও আপত্তি তুলেছেন মমতা। মমতা দিল্লীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এই ব্যারাজ তারা করতে দেবে না। সঙ্গত কারণে এত দিন ব্যারাজ নির্মাণ বিষয়ে ঢাকাকে দিয়ে আসা দিল্লীর প্রতিশ্রুতি আর ঠিক থাকছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী সংবাদপত্র আনন্দ বাজার পত্রিকা রবিবার প্রকাশিত এক খবরে মমতার নতুন এই বাংলাদেশ বিরোধিতার চিত্র তুলে ধরেছে। অথচ পানি চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই গঙ্গা ব্যারাজের বাস্তবায়ন চাইছে বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তি সই করেছিল বাংলাদেশ ও ভারত। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানি দিচ্ছে ভারত। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ার অভিযোগ বরাবরই করছে বাংলাদেশ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তির সময় ভারতকে আমরা গঙ্গা ব্যারাজ করার বিষয়টি জানিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে দিল্লীকে এ প্রকল্পের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করা হয়। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়ে দিল্লীর তরফ থেকে ঢাকাকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল।
barrage-teesta-layout
কিন্তু আনন্দ বাজারের খবরে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি মমতা গঙ্গা ব্যারাজের বিরোধিতা করেছেন। কয়েক পানি বিশেষজ্ঞর পরামর্শে মমতা মনে করছেন তার রাজ্য এতে বিপাকে পড়বে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজবাড়ীর পাংশায় বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাঁধটি থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার করিমপুর সীমান্ত ৮২ কিলোমিটার। আর ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে ঠিক ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রস্তাবিত বাঁধটির নির্মাণস্থল। ফারাক্কা বাঁধের দক্ষিণে মুর্শিদাবাদের সুতিতে গঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর থেকে বাংলাদেশের রাজশাহী ও পশ্চিমবঙ্গের জলঙ্গি পর্যন্ত গঙ্গা কখনও ভারত ও কখনও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বইছে। জলঙ্গি থেকেই পদ্মা নাম নিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হয়েছে। প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজটির নির্মাণ হওয়ার কথা পাংশায়। বাঁধটি দেয়া হলে সেই জল ১৬৫ কিলোমিটার উজান পর্যন্ত নদীতে পানি জমা (পন্ডিং) থাকবে। ঢাকার যুক্তি, তাতে পদ্মার পাশাপাশি গঙ্গার নাব্য সমস্যাও অনেকটা মিটবে। কারণ, এই ১৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ পড়েছে ৮২ কিলোমিটার, আর পশ্চিমবঙ্গের অংশ ৮৩ কিলোমিটার। সুতির পর থেকে ধুলিয়ান-জলঙ্গি পর্যন্ত গঙ্গায় এখন যে প্রবল পানির অভাব রয়েছে, সেই সমস্যা আর থাকবে না। ব্যারাজে আটকে থাকা পানি ভারতও খাল কেটে সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
কিন্তু মমতা সাম্প্রতিক বেশ কয়েকজন নদী বিশেষজ্ঞর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, পাংশায় বাঁধ হলে এ রাজ্যটির গঙ্গায় পানি যে বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই পানি ব্যবহারিক নিয়ন্ত্রণ রাজ্য বা দেশের হাতে থাকবে না। ফলে একদিকে পানি বেশি জমা হলে যেমন আশপাশের এলাকা প্লাবিত হতে পারে, তেমনই হঠাৎ বাংলাদেশ তাদের বাঁধ থেকে জল ছাড়লে গঙ্গার পানি কমে যাবে। অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা ফারাক্কার ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে আরও একটি বাঁধ হলে নদীয়া-মুর্শিদাবাদে ভাঙন সমস্যাও বাড়তে পারে। এসব যুক্তিতেই পাংশায় গঙ্গা ব্যারাজের বিরোধিতা করছে পশ্চিমবঙ্গ।
ভারতের কেন্দ্রীয় পানি সম্পদ সচিবকে এক চিঠিতে মমতা তার রাজ্যের অবস্থান জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘ওই প্রকল্প নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ অন্ধকারে রয়েছে। তাই জয়েন্ট টেকনিক্যাল সাব গ্রুপে রাজ্যের অংশ নেয়ার প্রশ্ন উঠছে না। ফারাক্কা পানিবণ্টন প্রকল্প রূপায়িত হওয়ার পর কেন্দ্র আজ পর্যন্ত ভাঙ্গন রোধের টাকা দেয়নি। এর পরিমাণ প্রায় ৭০৭ কোটি রূপি। নতুন বাঁধ তৈরি হলে ভাঙ্গন সমস্যা আরও তীব্র হবে। ফলে আর কোন বাঁধে সায় দিচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ।

কেন্দ্রীয় সচিব অমরজিৎ সিংহ তাঁর জবাবে মমতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই প্রকল্প বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞরা কলকাতায় এসে রাজ্যের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করতেও রাজি। সেই প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে মমতা। এরপরেই প্রশ্ন উঠেছে মমতার বিরোধিতায় তিস্তার পথেই হাঁটছে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প।

এদিকে গঙ্গা চুক্তির পানিসহ সারা বছর নদীগুলোতে যে পানি পাওয়া যায় তা শেষ পর্যন্ত নেমে যাচ্ছে সাগরে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট থেকেই যাচ্ছে। এ কারণে, এই পানির সবটুকু সাগরে যেতে না দিয়ে যদি বিশাল জলাধার বা ব্যারাজ তৈরি করা যায়, তাহলে শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি সংকট কাটিয়ে তা আবারও ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এতে অন্যান্য নদীর পানিও যথাযথভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হতে হবে, অন্যথায় নতুন চুক্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পর্যালোচনা অনুযায়ী এ প্রকল্পে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই উপকৃত হবে। ভারত এ প্রকল্পে দুটি বিষয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে এবং তাদের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দিয়ে দেখানো হয়েছে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।
প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণে ব্যায় ৩১,৪১৪ কোটি টাকা, পানি ধারন ২৯০ কোটি কিউবিক লিটার, ২৫ লাখ টন খাদ্য ও ২.৪ লাখ টন মৎস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের গড়াই, হিসনা, চন্দনা, বড়াল, ইছামতি নদী ফিডার নদী হিসাবে কাজ করবে ।

একই রকম সংবাদ

বিজ্ঞাপনspot_img

সর্বশেষ খবর